আইবিএস জটিলতা থেকে মুক্তির উপায় | ডা: তারিক আখতার খান
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম একটি পেটের অসুখ বা অন্ত্রের জটিলতা, যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের মানকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশেও প্রায় ৫-৮ শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আইবিএসের ফলে আক্রান্তরা প্রায়ই কোথাও যাওয়ার আগে টয়লেটের ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত থাকেন, যা তাদের মানসিক চাপও বাড়িয়ে তোলে।
অনেকের ক্ষেত্রে খাওয়ার পর পরই তলপেটে মলত্যাগের চাপ অনুভূত হয়, যা তাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। এই কারণে আইবিএস আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন থাকেন। ওষুধের মাধ্যমে আইবিএস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, তবে পুরোপুরি নিরাময় করা কঠিন। দীর্ঘ সময়ের কোষ্ঠকাঠিন্যে মল শক্ত হয়ে জমে যেতে পারে, যা বের করতে কষ্ট হয়।
এর ফলে বমিভাবও দেখা দিতে পারে। সঠিক যত্ন ও নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে আইবিএসের অস্বস্তি কমানো সম্ভব। এই ব্লগে আমরা আইবিএসের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধের উপায় এবং জটিলতা থেকে মুক্তির কার্যকর পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করবো।
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম কী?
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা IBS হলো অন্ত্রের একটি ক্রনিক ফাংশনাল সমস্যা, যা খাবার পরিপাকে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে। হজমতন্ত্রের অস্বাভাবিক কাজের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয় এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটি পেটের দীর্ঘমেয়াদী ও অস্বস্তিকর একটি সমস্যা, যা অনেকেই পুরাতন আমাশয় নামে জানেন।
আইবিএস (IBS) এর লক্ষণসমূহ
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের বেশ কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যা অনেকের দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধার কারণ হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে এই লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আইবিএস (IBS) এর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- পেটে তীব্র ব্যথা ও ফোলাভাব
- অতিরিক্ত গ্যাস জমা
- টয়লেটে বারবার যেতে চাওয়ার অনুভূতি
- বদহজম
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা
এছাড়াও, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক দুর্বলতা ও মাথাব্যথার মতো সমস্যাও দেখা যায়। লক্ষণগুলো ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
IBS রোগের কারণ কী? আইবিএস কেন হয়?
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই বা সঠিক কারণ এখনও অজানা, তবে কিছু সাধারণ কারণ এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিম্নোক্ত কারণগুলো রোগটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
- অন্ত্রে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগ
- খাদ্যাভ্যাস ও হজমের অস্বাভাবিকতা
- হরমোনাল পরিবর্তন (বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে)
- বংশগত কারণ
আইবিএস এর জন্য যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
নিয়মিত হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খেলে আইবিএসের উপসর্গ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আইবিএস এর সমস্যা কমাতে কয়েকটি খাবার পরিহার করা খুব জরুরি, আর তা হলো :
- শাক
- গম ও আটা জাতীয় খাবার
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলাদার খাবার
- দুগ্ধজাত পণ্য
- উচ্চ ফ্রুক্টোজ যুক্ত খাবার
- ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়
আইবিএস রোগ প্রতিরোধে করণীয় | আইবিএস ভালো করার উপায়
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল আইবিএস এর লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্য নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো গুরুত্বপূর্ণ:
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
- ধ্যান ও যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি পান করা
- অদ্রবনীয় আশ, যেমন-শাক; ফডম্যাপ জাতীয় খাবার, যেমন-গম; দুধ ও তৈলাক্ত খাবার বর্জন
- খাবার ধীর গতিতে খাওয়া
- অ্যালকোহল ও ক্যাফিন সীমিত করা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল অবলম্বন করা
- মানসিক রোগের চিকিৎসা করা
আইবিএস এর আধুনিক চিকিৎসা
আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তি এবং গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিয়মিত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে আইবিএস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখানে কিছু কার্যকর আধুনিক চিকিৎসার পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
- ডায়েটারি পরিবর্তন: লো-ফডম্যাপ ডায়েট উপকারী, যেখানে কিছু ফাইবার ও শর্করা কমানো হয়।
- মেডিসিন: অ্যান্টিডায়রিয়ালস অথবা ল্যাক্সাটিভস এবং স্পাসমোলিটিক্স ব্যবহার করা হয়, রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী।
- প্রোবায়োটিকস: হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া গ্রহণের মাধ্যমে পেটের স্বাস্থ্য উন্নত করা যায়।
- মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা: স্ট্রেস ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে CBT (কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি) কার্যকর।
- নতুন গবেষণা: নতুন ড্রাগের পরীক্ষা চলছে।
ঘরোয়া উপায়ে আইবিএস রোগ প্রতিকার
আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। এগুলো স্বল্পপণ্যের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এখানে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হলো:
- সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানি পান করুন; এটি পেট পরিষ্কার করে।
- পেঁপে ও কলা এই ফলগুলো ফাইবার সমৃদ্ধ এবং সহজে হজম হয়।
- লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে পান করুন, যা পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
- আদা এবং দারুচিনি মিশ্রিত চা পান করলে গ্যাস কমে।
- তুলসী চা পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- জিরা ও হলুদ এই দুটি মিশ্রিত করে খেলে হজমে সহায়তা করে।
- হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- দইয়ে প্রোবায়োটিকস রয়েছে, যা হজমে উপকারী।
- জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করলে পেটের জন্য ভালো।
- রান্নায় রোজমেরি ও থাইম মশলা ব্যবহার করুন, যা গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
আইবিএস এর ওষুধ
আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) চিকিৎসায় কিছু সাধারণ ওষুধ রয়েছে:
- অ্যান্টিডায়রিয়ালস: ডায়রিয়া কমাতে (যেমন, লোপেরামাইড)।
- ল্যাক্সেটিভস: কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে (যেমন, পোলিথিলিন গ্লাইকোল)।
- স্পাসমোলিটিক্স: পেটের ব্যথা কমাতে (যেমন, হায়োসিন)।
- প্রোবায়োটিকস: হজমের উন্নতি ঘটাতে।
- সার্কোসেন (Linzess): কোষ্ঠকাঠিন্য ও ব্যথা উপশমে।
- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: উদ্বেগ ও ব্যথা কমাতে (যেমন, অ্যামিট্রিপটিলিন, এসিটালোপ্রাম)।
বিঃ দ্রঃ (আইবিএসের জন্য সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রতিটি রোগীর লক্ষণ ও অবস্থা অনুযায়ী ওষুধের প্রয়োজন ও কার্যকারিতা ভিন্ন হতে পারে।)
ডা: তারিক আখতার খানের আইবিএস চিকিৎসা পদ্ধতি
ডা: তারিক আখতার খান রোগীদের আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম)-এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য ব্যক্তিগতকৃত (personalized/ tailored) চিকিৎসা পরিকল্পনা ব্যবহার করেন। তার আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ:
- সঠিক রোগ নির্ণয়: ডা: তারিক আখতার খান প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে আইবিএস নির্ণয় নিশ্চিত করেন এবং অন্যান্য অন্ত্রের রোগ, যেমন প্রদাহজনক অন্ত্রের সমস্যা ও ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, দূর করতে বিশদ মূল্যায়ন করেন।
- খাদ্যতালিকাগত পরামর্শ: রোগীর খাবার থেকে সম্ভাব্য ট্রিগার, যেমন শাক, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার কমানোর জন্য কাস্টমাইজড ডায়েট প্ল্যান দেন, যা উপসর্গ হ্রাসে সহায়ক।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: স্ট্রেস আইবিএসের লক্ষণ বাড়াতে পারে। তাই ডা: তারিক আখতার খান রোগীদের মেডিটেশন, রিলাক্সেশন ব্যায়াম, এবং কগনিটিভ-আচরণগত থেরাপির (CBT) মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন।
- ওষুধ: গুরুতর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য, তিনি রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিস্পাসমোডিকস, ল্যাক্সেটিভস বা অ্যান্টিডায়রিয়াস ওষুধ প্রদান করেন এবং রোগীর অবস্থার অগ্রগতি মনিটর করেন।
- দীর্ঘমেয়াদী যত্ন ও ফলো-আপ: আইবিএস-এর জন্য চলমান যত্ন প্রয়োজন। ডা: তারিক আখতার খান তার রোগীদের নিয়মিত ফলো-আপ নিশ্চিত করেন, যা উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক।
আইবিএস রোগ এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ও সচেতনতা
আইবিএস কোনো গুরুতর রোগ না হলেও এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করে উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
যদি আপনি আইবিএস রোগে আক্রান্ত হন বা দীর্ঘদিন ধরে এই রোগের লক্ষণ অনুভব করছেন, তাহলে এখনই ডা: তারিক আখতার খানের পরামর্শ নিন । তিনি বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য কোলোরেক্টাল সার্জন, যিনি আইবিএস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বহু বছর ধরে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।