পাইলস এর চিকিৎসা; পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
বর্তমানে বাংলাদেশে পাইলস খুব পরিচিত একটি রোগের নাম। যে কোনো বয়সের নারী ও পুরুষের এ রোগ হতে পারে। পাইলস এর চিকিৎসা; পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়গুলো জানা থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। অন্যথায় জটিল হয়ে গেলে এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে অপারেশন করতে হয়।
সঠিক সময়ে পাইলসের সঠিক চিকিৎসা করতে হলে জানতে হবে পাইলস কী? পাইলসের লক্ষণ, এ রোগে কী কী সমস্যা হয় ও এর প্রতিকারগুলো কী? এ ব্লগে এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
পাইলস (অর্শরোগ) কী?
পাইলস (Hemorrhoids) হল এমন রোগ যে রোগে মলদ্বারের ভিতর থেকে রক্তনালীর একটি পিন্ড ফুলে যায় এবং কখনো কখনো এটি বাইরে বের হয়ে আসে। পাইলসের সমস্যায় সাধারণত ব্যাথা হয় না। তবে জটিলতা দেখা দিলে ব্যাথা হতে পারে। গ্রাম বাংলায় এ রোগটি অর্শরোগ নামে পরিচিত। মেডিকেলের পরিভাষায় রোগটিকে Hemorrhoids বলা হয়।
পাইলসের চিকিৎসা
পাইলসের ধরনের উপর ভিত্তি করে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। পাইলস দুই ধরনের হয়।
- ভিতরের পাইলস: ভিতরের পাইলস হল মলদ্বারের ভিতরে রক্তনালী ফুলে যাওয়া। রক্তনালী থেকে রক্তপিন্ড কতখানি বের হয়ে আসে তার উপর ভিত্তি করে এ ধরনের পাইলসকে ১ম,২য়,৩য় ও ৪র্থ ডিগ্রীতে ভাগ করা হয়।
- বাহিরের পাইলস: মলদ্বারের বাইরের চামড়া দ্বারা আবৃত থাকে। এর মধ্যে রক্ত জমাট বাধলে তা ফুলে ওঠে।
পাইলসের প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে কেবল ঔষধ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমে পাইলস নিরাময় করা সম্ভব। তবে রোগটি জটিল হয়ে গেলে বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কখনো কখনো অপারেশনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়।
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা / কী খেলে পাইলস ভালো হয়?
পাইলস থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা রয়েছে। এ চিকিৎসাগুলো যত্ন সহকারে করা হলে ঘরে বসেই পাইলস থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসাগুলো হলো:
- বেশি করে শাক-সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া
- নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়া
- পাকা বেলের শরবত খাওয়া
- উষ্ণ গরম পানিতে সেঁক নেওয়া
- পায়ুপথে পিচ্ছিল পদার্থ ব্যবহার করা
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
‘পাইলস এর চিকিৎসা; পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়’ এ ব্লগ থেকে অধিকাংশ পাঠক আশা করেন এমন টিপস ও উপায়ের যেগুলোর মাধ্যমে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যাবে। পাঠকের জন্য সে উপায়গুলো নিচে তুলে ধরা হচ্ছে:
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: প্রতিদিনি শাক সবজি, ফলমূল, মটরশুটি ও ডাল ইত্যাদি খাবার খাওয়া। ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে পায়খানা স্বাভাবিক থাকে এবং পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- পানি পান বৃদ্ধি: প্রতিদিন প্রয়োজনমত পানি পান করতে হবে। পাইলসের চিকিৎসায় অন্যতম জরুরী বিষয় হলো প্রচুর পানি পান করা। চা-কফি ও কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকা।
- ইসবগুলে ভুসি: প্রতিদিন সকালে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে পান করলে পায়খানা স্বাভাবিক থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস থেকে মুক্ত থাকা যায়। বেশি পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা ও ব্যাথা হতে পারে। তাই প্রয়োজনমত খাওয়া।
- খাঁটি ঘি: অনেকের ধারণা প্রতিদিন পরিমাণমত ঘি খেলে পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই।
- টয়লেটে কম সময় ব্যয়: টয়লেটে গিয়ে অনেকে প্রচুর সময় ব্যয় করে, এটা উচিৎ নয়। স্বস্তি মেলে এ পরিমাণ পায়খানা হয়ে গেলে টয়লেট থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত।
পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণ / পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়?
কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো দেখে বুঝা যায় যে একজন মানুষ পাইলসে আক্রান্ত। নিচে লক্ষণগুলো লিস্ট আকারে তুলে ধরা হলো:
- মলদ্বার থেকে রক্ত পড়া
- মলদ্বারে চুলকানি
- মলদ্বার ও আশপাশে যন্ত্রণাদায়ক পিন্ড
- পায়খানা করার সময় ও পরে অস্বস্তি
যেসব কারণে পাইলস হয়
পাইলস এর চিকিৎসা; পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় ব্লগ থেকে অনেকের জানার আগ্রহ থাকে, পাইলস কেন হয়? পাইলসের কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য
- বারবার ডায়রিয়া
- টয়লেটে বেশি সময় ব্যয়
- পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন
- পায়খানার সময় জোরে চাপ দেওয়া
- পায়খানার বেগ আটকে রাখা
- শারীরিক পরিশ্রম না করা
- পায়ুপথে সহবাস
পাইলস বা হেমোরয়েড নির্ণয়
পাইলস এর চিকিৎসা; পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় হিসেবে যখন কোনো রোগী কলোরেকটাল সার্জনের শরণাপন্ন হয়, চিকিৎসক দুইভাবে রোগটি নির্ণয় করেন।
- ১. শারীরিক পরীক্ষা: বাহ্যিক পাইলসের ক্ষেত্রে চোখে দেখেই রোগ নির্ণয় করা হয়। অভ্যন্তরীণ পাইলসে লুব্রিকেটেড আঙ্গুল ও গ্লাভড মলদ্বারে ঢুকিয়ে রোগ নির্ণয় করে থাকেন চিকিৎসক।
- ২. স্কোপিক/ভিজ্যুয়াল পরিদর্শন: প্রোক্টোস্কোপ/অ্যানাস্কোপ/সিগমায়েডোস্কেপ নামক যন্ত্র ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগ পরীক্ষা করা হয়।
পাইলসের সমস্যায় কি কি খাবার খাওয়া নিষেধ?
পাইলস সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যেসব খাবার পরিহার করতে হবে, সে খাবারগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
- লাল মাংস
- দুগ্ধজাত খাবার
- তেলে ভাজা খাবার
- মশলাদার খাবার
- কফি ও চা
- অ্যালকোহল
- কোমল পানীয়
- বাদাম
পাইলস বিষেশজ্ঞ কারা?
কলোরেকটাল সার্জন হচ্ছেন পাইলস, মলাশয়, পায়ুপথ, বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্তের এর সকল রোগের চিকিৎসা ও অপারেশনে বিশেষজ্ঞ। পাইলসের যে কোনো সমস্যায় কলোরেকটাল সার্জনের সাথে পরামর্শ করুন।
হাতুড়ে ও কবিরাজী চিকিৎসা থেকে দূরে থাকুন
পাইলসের চিকিৎসা; পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এ শিরোনামে অনেক হাতুড়ে চিকিৎসক ও কবিরাজ সাধারণ মানুষকে অপচিকিৎসা দিয়ে থাকেন। পাইলসের সমস্যায় কোনো ভাবেই এ শেণির মানুষের কাছে যাওয়া যাবে না।
ডাক্তার তারিক আখতার খান পাইলস, পায়ুপথ, মলাশয়, বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্তের সকল রোগের চিকিৎসা ও অপারেশনে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কলোরেকটাল সার্জন। তিনি যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ থেকে FRCS করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলোরেকটাল সার্জারি বিষয়ের উপর এমএস ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি ইতোপূর্বে শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজে ও বর্তমানে মুগদা মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করছেন। পাইলসের সমস্যায় ১৫ বছরের অধিক অভিজ্ঞ এ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন।