অপারেশন ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা
পাইলস রোগের বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। প্রাথমিক ধাপে ঔষধের মাধ্যমেই পাইলস নিরাময় করা সম্ভব হয়। পরের ধাপগুলোতে কখনো কখনো চিকিৎসকরা অপারেশনের পরামর্শ দেন। কিন্তু অপারেশন ভীতি কাজ করায় অধিকাংশ রোগী অপারেশন ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা খোঁজ করে থাকেন। বিনা অপারেশনে পাইলসের যতগুলো চিকিৎসার রয়েছে এর অন্যতম হলো ‘রাবার রিং লাইগেশন’, ইঞ্জেকশন ও লেজার পদ্ধতি।
সার্জারি ছাড়াই পাইলস নিরাময়
পাইলস রোগের চারটা ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপ বা ডিগ্রীতে বিনা অপারেশনে কিছু নিয়ম মানার এবং ঔষধ সেবনের মাধ্যমে পাইলস নিরাময় হয়ে যায়। দ্বিতীয় ডিগ্রী থেকে চতুর্থ ডিগ্রীতে যাদের সমস্যা রয়েছে, অপারেশন ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা তাদের ক্ষেত্রেও সম্ভব। নিচে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো-
- প্রথম ডিগ্রী পাইলস: প্রথম ডিগ্রী পাইলসে মলদ্বার দিয়ে কেবল রক্ত যায়। এ ডিগ্রীতে আক্রান্ত রোগীদের ঔষধ দেওয়া হয়। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেওয়া হয়। পায়খানা করার সময় চাপ না দেওয়া, পায়ুপথ পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখা, বাথরুমে বেশি সময় ব্যয় না করা এবং হালকা ব্যায়াম করার জন্য বলা হয়। এসব মেনে চললেই পাইলস ভালো হয়ে যায়।
- দ্বিতীয় ডিগ্রী পাইলস: দ্বিতীয় ডিগ্রী পাইলসে মলত্যাগের সময় তাজা রক্ত যায়। এমন রোগীদের মলদ্বারে সাধারণত ব্যাথা হয় না; তবে মনে হয় ভেতর থেকে কী যেন বাইরের দিকে বের হয়ে আসছে। এ ধাপের পাইলসে রাবার ব্যান্ড/রিং লাইগেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এ পদ্ধতিতে রোগীর আক্রান্ত স্থানে কাটা-ছেঁড়া, রোগীকে অজ্ঞান ও হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয় না। পাইলসের গোড়ায় যন্ত্রের সাহায্যে রিং বা ব্যান্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে পাঁচ/ছয়দিনের মাথায় পাইলস খসে পড়ে যায়। স্ক্লেরোথেরাপি বা ইঞ্জেকশন ও লেজারের মাধ্যমেও দ্বিতীয় ডিগ্রী পাইলসে চিকিৎসা করা হয়।
- তৃতীয় ডিগ্রী পাইলস: মলত্যাগের পর বাড়তি মাংসের মতো যদি মলদ্বার দিয়ে বের হয় এবং সেটা চাপ দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে পাইলস তৃতীয় ডিগ্রীতে আছে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত অপারেশন ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা সম্ভব। এক্ষেত্রে ‘লংগো অপারেশন’ বা স্টেপল হেমোরয়ডোপিক্স অধিক কার্যকর। বাইরে কাটা-ছেঁড়া না থাকায় অপারেশনের সময় রক্তপাত এবংপরে কোনো ব্যাথা হয় না। ৩/৪ দিনে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্মসহ স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করতে পারেন। লেজার পদ্ধতি যন্ত্রের সাহায্যেও এ ধাপে পাইলস রোগীদের প্রচলিত অপারেশনের বাইরে চিকিৎসা করা হয়।
- চতুর্থ ডিগ্রী: চতুর্থ ডিগ্রী পাইলস হলো, মলত্যাগের পর মলদ্বার দিয়ে মাংস বের হয় এবং সেটা চাপ দিয়েও ভেতরে ঢুকানো যায় না। এ ক্ষেত্রেও তৃতীয় ডিগ্রীর মতো প্রচলিত অপারেশন ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা সম্ভব। তবে মাংসপিন্ডে ইনফেকশন হয় গেলে, প্রচলিত অপারেশনের মাধ্যমে তা কেটে ফেলা হয়।
পাইলস অপারেশনে খরচ কত?
পাইলস অপারেশনে খরচ কত হয়? এক বাক্যে প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন । কারণ, ডাক্তার, হাসপাতাল ও রোগীর কন্ডিশন ভেদে খরচ নানান রকম হয়। ডাক্তার ও হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ারে কথা বলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।
পাইলস এর জন্য কোন ডাক্তার দেখাবো
পাইলস রোগের জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন কলোরেকটাল সার্জন। যে বিশেষজ্ঞ পায়ুপথ, মলাশয়, বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের সকল রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাকে বলা হয় কলোরেকটাল সার্জন। পাইলস সমস্যায় কোনো কবিরাজ বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কলোরেকটাল সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
অপারেশনের পর কি পাইলস আবার হয়?
পায়ুপথে পাইলস, এনাল ফিসার ও ফিস্টুলা এ রোগগুলো হয়। পাইলস অপারেশনের পর মলদ্বারে এনাল ফিসার ও ফিস্টুলা হলে অনেকে সেটাকেও পাইলস মনে করে থাকেন। বাস্তবতা হলো, অপারেশনের পর পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২ ভাগ। অর্থাৎ অপারেশনের পর পুনরায় পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ডাক্তার তারিক আখতার খান পাইলস অপারেশন, পায়ুপথ, মলাশয়, বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্তের সকল রোগের চিকিৎসায় একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কলোরেকটাল সার্জন। তিনি রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এবং সার্জনস অফ গ্লাসগোর একজন ফেলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলোরেকটাল সার্জারি বিষয়ের উপর এমএস ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি ইতোপূর্বে শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজে ও বর্তমানে মুগদা মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করছেন। পাইলস থেকে নিরাময় পেতে এবং অপারেশন ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা করাতে ১৫ বছরের অধিক অভিজ্ঞ এ চিকিৎসকের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিন।