এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায় । বাংলাদেশ
Anal ও Fissure দুটি ইংরেজি শব্দ। Anal অর্থ হলো পায়ুপথ, মলদ্বার এবং Fissure অর্থ হলো ফাটল বা চিড়। অর্থাৎ পায়ুপথ বা মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে সেখানে যে ক্ষত হয় ইংরেজিতে সেটাকে Anal Fissure বলে। এনাল ফিসার হলে মলত্যাগ করার সময় মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হয় এবং ব্যাথা হয়। এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায়গুলো জানা থাকলে রোগটি থেকে নিজেকে সহজেই মুক্ত রাখা যায়।
পায়ুপথের রোগ হওয়ায় দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভোগা সত্ত্বেও অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে সমস্যাটি। একপর্যায়ে অপারেশন ছাড়া এ রোগ প্রতিকারের কোনো উপায় থাকে না। অথচ এনাল ফিসার সম্পর্কে সচেতন থাকলে শুরুতেই জটিল এ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হত। তাই ব্লগটিতে এনাল ফিসার ও এর প্রতিকারগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এনাল ফিসার বা গেজ রোগ থেকে মুক্তি পেতে করণীয়
এনাল ফিসার বা গেজ রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পরিবর্তন করতে হবে খাদ্যাভ্যাস। অবলম্বন করতে হবে প্রাথমিক কিছু উপায়। সর্বোপরি সচেতন হয়ে চলতে পারলে রোগটি থেকে সৃষ্ট যে কোনো জটিল পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়। নিচে এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায়গুলো তুলে ধরা হলো:
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: যেসব খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ অত্যধিক বেশি থাকে সেসব খাবার এড়িয়ে চলা। কারণ এসব খাবার বদহজমের সৃষ্টি করে এবং মল শক্ত করে দেয়। ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া। যেমন: শাকসবজি, লাল আটা, ফলমূল, পাকাবেল, ইত্যাদি। পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি তরল খাবার খাওয়া।
- নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়া: ইসবগুলের ভুসি অত্যন্ত উপকারী খাবার। এটি পায়খানা স্বাভাবিক করে। স্বাভাবিক পায়খানা হচ্ছে পাকা কলার মত নরম। এর চেয়ে বেশি পাতলা বা বেশি শক্ত উভয়ই খারাপ। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ ইসবগুল মিশিয়ে খেলে পায়খানা এরকম নরম থাকে। তবে কেউ যদি ইসবগুলের ভুসি খেয়ে পর্যাপ্ত পানি পান না করে, তার মল আরও শক্ত হয়ে যায়।
- পায়ুপথ পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখা: মলত্যাগের পর আলতোভাবে পায়ুপথ পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া এবং জায়গাটি শুকনো রাখার চেষ্টা করা। অপরিষ্কার কাপড় পরিধান না করা। এতে পায়ুপথ ক্ষত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে।
- দীর্ঘক্ষণ পায়খানা চেপে না রাখা: পায়খানা চেপে রাখার বদভ্যাস থাকলে দূর করতে হবে। কারণ পায়খানা চেপে রাখলে তা শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। ফলে শক্ত মলের আঘাতে মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে এনাল ফিসার হয়।
- নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা: প্রতিদিন নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে Bowel Movement (মলত্যাগ) বাড়ে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যমুক্ত জীবনযাপন করা এবং এনাল ফিসার থেকে মুক্ত থাকা যায়।
এনাল ফিসার (Anal Fissure) কী?
Anal ও Fissure দুটি ইংরেজি শব্দ। Anal অর্থ হলো পায়ুপথ, মলদ্বার এবং Fissure অর্থ হলো ফাটল বা চিড়। অর্থাৎ পায়ুপথ বা মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে সেখানে যে ক্ষত হয় ইংরেজিতে সেটাকে Anal Fissure বলে।
এনাল ফিসার কেন হয়?
এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায় জানার পর মনে এ কৌতুহল সৃষ্টি হতে পারে যে, রোগটি কেন হয়? মল শক্ত হয়ে গেলে সেটার আঘাতে মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে এনাল ফিশার হতে পারে। তবে অতিরিক্ত ডায়রিয়া, আলসারেটিভ কোলাইটিস, মলদ্বারের মাংসপেশি টাইট হয়ে যাওয়া, যৌনবাহিত সিফিলিস-হারপিস রোগ, সমকামিতা বা এনাল সেক্স, গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য ও ইনফেকশনের কারণেও রোগটি হতে পারে।
এনাল ফিসারের লক্ষণগুলো কী কী?
কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো দেখে বুঝা যায় মলদ্বারে এনাল ফিশারের সমস্যা হয়েছে। রোগটি সম্পর্কে সবাই যেন সচেতন হতে পারে, এজন্য নিচে রোগটির লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো:
- মলত্যাগের সময় যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথা হওয়া
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
- মলদ্বারে অতিরিক্ত চামড়া সৃষ্টি হওয়া
- পায়ুপথে চুলকানি হওয়া
- মলদার সরু হয়ে যাওয়া
যেভাবে নির্ণয় করা হয় এনাল ফিসার
একজন কলোরেকটাল সার্জন নানান শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর এনাল ফিসার নির্ণয় করে থাকেন। প্রয়োজন হলে রোগ নির্ণয়ের জন্য কলোনোস্কপিও করে থাকেন।
মলদ্বারের ব্যাথায় ঘরোয়া চিকিৎসা
এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা রয়েছে। যেগুলো অবলম্বন করলে রোগটি থেকে প্রাথমিক অবস্থায় পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এ চিকিৎসাগুলো হলো:
- গরম পানির সেঁক নেওয়া (Sitz bath): একটি বলে কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে পরিমাণমত ভায়োডিন সল্যুশন অথবা খাবার লবন মিশিয়ে মলদ্বার ডুবিয়ে বসে থাকা। এতে মলদ্বারের মাংসপেশি কিছুটা শিথিল হয় এবং ব্যাথা কমে আসে। দিনে ২ থেকে ৩ বার গরম পানির সেঁক নিলে এনাল ফিসার রোগীরা বেশ স্বস্তি পেয়ে থাকেন।
- মলদ্বারের মুখে পিচ্ছিল পদার্থের প্রয়োগ: এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে মলদ্বারের মুখে পিচ্ছিল পদার্থ, গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা। এতে মলত্যাগের সময় ছেঁড়া জায়গায় ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট ব্যাথার তীব্রতা কিছুটা কমে।
- মলত্যাগের সময় বেশী জোরে চাপ দেয়া থেকে বিরত থাকা: মলত্যাগের সময় বেশি জোরে চাপ দিলে মলদ্বার আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। এজন্য আগে সম্পূর্ণ রিল্যাক্স হয়ে তারপর স্বাভাবিক চাপে পায়খানা করা।
- মল নরম করার ঔষধ: শক্ত মল বা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে অনেক সময় মলদ্বার ছিঁড়ে যায়। এজন্য কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ গ্রহণ করা। ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ইসবগুলের ভুসি ও পাকা বেলের শরবত খাওয়া।
লেজারের মাধ্যমে এনাল ফিসারের চিকিৎসা
অধিকাংশ সময় অপারেশন ছাড়াই ভালো হয় এনাল ফিসার। তবে রোগটি জটিল হয়ে গেলে অস্ত্রপোচারের প্রয়োজন হয়। অপারেশন ভয় পাওয়ায় অনেকেই এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। এরকম রোগীদের জন্য রয়েছে লেজার চিকিৎসা ব্যবস্থা। কাটাছেড়া ছাড়াই সামান্য ছিদ্র করে আধুনিক পদ্ধতিতে করা হয় লেজার অপারেশন। অপারেশনে কোনো ব্যাথা হয় না। তাই দক্ষ ডাক্তারের মাধ্যমে লেজার অপারেশন করালে স্থায়ীভাবে শতভাগ সুস্থ থাকা যায়।
এনাল ফিসারে অবহেলা তৈরি করে জটিলতা
অনেকে লজ্জা করে এনাল ফিসারের চিকিৎসায় অবহেলা করে থাকেন। এমনটা করা উচিৎ নয়। অবহলো করলে ক্ষতস্থানে এনাল ফিস্টুলা ও পায়ুপথের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
এনাল ফিসারে অপচিকিৎসার পরিণাম
অনেক রোগী অর্থনৈতিক কারণে বা অপারেশনের ভয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে কবিরাজ ও অদক্ষ মানুষদের কাছে চিকিৎসার জন্য যান। এর ফলে শরীরে নানান জটিলতা দেখা দেয়। কখনো কখনো এ জটিলতা মানুষের জীবনকে সংকটাপন্ন করে তোলে।
এনাল ফিসারের ঝুঁকি কাদের বেশি?
যে কোনো বয়সের নারী বা পুরুষের এনাল ফিসার সমস্যা হতে পারে। তবে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষদের এ রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশি। বয়স বাড়তে থাকলে এনাল ফিসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
পাইলস ও এনাল ফিসারের পার্থক্য
এনাল ফিসার হলে পায়ুপথে ক্ষত ও রক্তপাত হয়। অন্যদিকে পাইলস হলে পায়ুপথে গোটা হয় যা সাধারণত মলত্যাগের পর বের হয়ে আসে। এছাড়া শ্লেষ্মার দেখতে কিছু পিচ্ছিল পদার্থও বের হতে পারে। এনাল ফিসার হলে তীব্র ব্যাথা হয় এবং পাইলসে জটিলতা না হলে ব্যাথা হয় না।
কোন ডাক্তার দেখাবেন?
এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায় হলো অভিজ্ঞ কলোরেকটাল সার্জনের স্মরণাপন্ন হওয়া। সময়মত দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমেই এ রোগ নিরাময় হয়।
ডাক্তার তারিক আখতার খান পায়ুপথ, মলাশয়, বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্তের সকল রোগের চিকিৎসা ও অপারেশনে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কলোরেকটাল সার্জন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলোরেকটাল সার্জারি বিষয়ের উপর এমএস ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি এফসিপিএস ও এফআরসিএস (গ্লাসগো) ডিগ্রি প্রাপ্ত। তিনি ইতোপূর্বে শহীদ সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজে ও বর্তমানে মুগদা মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করছেন। এনাল ফিসার সমস্যায় ১৫ বছরের অধিক অভিজ্ঞ এ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখুন।